
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা সহ পাশ্ববর্তী উপজেলাগুলোর সীমান্তবর্তী এলাকায় চোরাচালান প্রতিরোধ ও বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ এই পেশা থেকে শ্রমজীবী মানুষকে ফিরিয়ে আনতে ও নিরুৎসাহিত করার আহবান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কমিউনিটি নেতা ও জৈন্তাপুর প্রবাসী গ্রুপের উপনেতা রোটারিয়ান আবদুল গাফফার চৌধুরী খসরু।
সম্প্রতি সময়ে চলতি অক্টোবর মাসের ২২ তারিখ জৈন্তাপুর উপজেলার চারিকাঠা এলাকায় বিজিবির গুলিতে নিহত আলমাস উদ্দিন (২৩) ও কানাইঘাট উপজেলার ডনা সীমান্তে ভারতের অভ্যন্তরে খাসিয়াদের গুলিতে নিহত শাকিল আহমেদ (২০) এর অকাল মৃত্যুর ঘটনায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সেই সাথে সীমান্তবর্তী এলাকায় কর্মসংস্থানের অভাব থাকায় বাধ্য হয়ে যারা ঝুঁকিপূর্ণ ও সম্পূর্ণ বেয়াইনি কাজ থেকে শ্রমিকদের ফেরানোর উদ্যোগ হিসেবে বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির আহবান জানান।
সোমবার (২৭শে অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় রাত ১:২০ মিনিটে সুদূর যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিজের ফেইসবুক আইডিতে জৈন্তাপুরবাসীর প্রতি আহবান জানিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বার্তা (স্ট্যাটাস) লিখেন। এ সময় তিনি তার স্ট্যাটাসে নিহত আলমাস উদ্দিন ও শাকিলের ছবি শেয়ার করেন। তার লেখা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাসটি হুবহু নিচে তুলে ধরা হলো…….
” চারিকাটায় চোরাই পণ্য বহনকালে বিজিবির গুলিতে নি*হত হলেন তরতাজা যুবক আমাদেরই এক ভাই আলমাস ।
যার পরিবারে চলছে করুন আহাজারি আর বইছে শোকের ছায়া।
একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে দূর্ঘটনায় মেরুদণ্ডে আঘাত পাওয়া বাবার মাতায় যেনো আকাশ ভেংগে পড়েছে।
প্রিয় জৈন্তাবাসী, চোরাকারবার বা স্থানীয় ভাষায় যাকে আমরা ‘ভুঙ্গা’ বলি—এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এটি প্রথম হ*ত্যাকাণ্ড নয়। এর আগেও কত মায়ের বুক খালি হয়েছে! কখনো বিএসএফ-এর গু*লিতে, কখনো ভারতীয় খাসিয়াদের হাতে, আবার কখনো চোরাই পণ্য বহনকারী বেপরোয়া গাড়ির দু*র্ঘটনায় ঝরে গেছে কত তাজা প্রাণ। এই মৃ*ত্যুর সঠিক সংখ্যা আমার জানা নেই, কিন্তু এ সংখ্যাটা নিশ্চিতভাবেই অনেক বেশি।
দুঃখজনক হলেও সত্য, চোরাকারবার নামক এই মারাত্মক ব্যাধিটিকে আমরা যেন একরকম নিয়মে পরিণত করে ফেলছি। অল্প সময়ে ও পরিশ্রমে অধিক লাভের আশায় আমাদের এলাকার অনেকেই আজ এই অবৈধ ব্যবসায় ঝুঁকছে। আর এর করুণ পরিণতিতে দিন দিন বলির পাঁঠা হচ্ছে নিরীহ দিনমজুর, দরিদ্র ড্রাইভার কিংবা সাধারণ পথচারীরা। অথচ এই ব্যবসার মূল রাঘব বোয়ালরা সবসময় ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
আমার নির্বাচনকালীন সময়ে আমি এই বিষয়ে একটি বক্তব্য দিয়েছিলাম।
যে আমি নির্বাচিত হলে স্থানীয় প্রশাসন কে নিয়ে চোরাকারবার বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবো।সেটি নিয়েও অনেকে জল ঘোলা করেছেন এবং আমার ভোটারদের ভুল বুঝিয়েছেন।
আমি নাকি মানুষের পে*টে লাতি মারতে গেছি।
প্রিয় জৈন্তার মানুষ, জীবন বাজি রেখে উপার্জনের এই ঝুঁকিপূর্ণ পথ কোনোভাবেই শুভ নয়। আমি স্বীকার করি, আজ বৃহত্তর জৈন্তার মানুষ কর্মসংস্থানের অভাবে ভুগছে। কিন্তু তাই বলে এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হবে? দয়া করে ভাবুন, একটি তরুণ প্রাণের মূল্য কি স্রেফ ৫০০ বা ১০০০ টাকা হতে পারে?
প্রথমত, আমাদের নিজেদেরই সচেতন হতে হবে।
পাশাপাশি, আমাদের জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসনের ও সরকারের কাছে জোর দাবি—এই অবৈধ ব্যবসা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিন। একই সাথে, আমাদের নিরীহ দিনমজুরদের জন্য বিকল্প ও স্থায়ী উপার্জনের ব্যবস্থা করে দিন, যাতে আর কোনো মায়ের বুক এভাবে খালি না হয়।
আসসালামু আলাইকুম।
আমেরিকা থেকে আপনাদেরই আব্দুল গাফফার চৌধুরী (খসরু)”।