জৈন্তাপুর উপজেলায় কিছু উদ্যোমি যুবকদের সাহসী উদ্যোগে স্হানীয় ভাবে তহবিল সংগ্রহ করে ৭৩৫ ফুট রাস্তা সিসি ঢালাই সম্পন্ন করে দৃষ্টান্ত স্হাপন করলো। এ সময় তাদের সাহসী উদ্যোগে স্হানীয়দের পাশাপাশি ২ নং জৈন্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বড় ধরণের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
শুক্রবার (১৩ই জুন) সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় চতুর্থ ধাপে সিসি ঢালাইয়ের কাজ চলমান রয়েছে যা ৭৩৫ ফুট রাস্তা পাকা করণের সমাপ্তির পর্যায়ে। জৈন্তাপুর উপজেলার ২ নং জৈন্তাপুর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত কৃষিপ্রধান ও জনবহুল একটি গ্রাম হলো ২ নং লক্ষিপুর। সিলেট তামাবিল মহাসড়কের ৪ নং বাংলা বাজার ব্রীজের পাশ হয়ে এই গ্রামের প্রবেশ রাস্তা শুরু হয়। শুরুতে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার অংশ সরকারি ভাবে অতীতে পাকা থাকলেও ২ নং লক্ষিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে বাকি অংশটুকু এতদিন ছিলো সম্পূর্ণ মাটির রাস্তা। যার ফলে বিগত সময়ে ২ নং লক্ষিপুর গ্রামের ৮০ শতাংশ এলাকার মানুষ বর্ষা মৌসুমে মাটির রাস্তায় কাঁদা জমে যাওয়ার ফলে সিমাহীন দূর্ভোগের স্বীকার হতে হতো। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে কোন ধরণের গাড়ী, ইজি বাইক এমনকি মটর সাইকেল চালানো পর্যন্ত দূর্বিষহ হয়ে উঠতো।
এর ফলে বর্ষা মৌসুমে জরুরী প্রয়োজনে রোগীবাহী এম্বুলেন্স, স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় যাতায়াতরত শিক্ষার্থীরা চরম দূর্ভোগ পোহাতে হতো।
এমন এক সময় স্হানীয় যুব সমাজের উদ্যোগে স্হানীয় ভাবে তহবিল সংগ্রহ ও সেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে প্রথম ধাপে ৭৩৫ ফুট রাস্তা পাকা করণের সাহসী উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। এই সাহসী উদ্যোগের মুল কারিগর হলেন স্হানীয় তরুণ ব্যবসায়ী সেলিম আহমেদ, আবুল হাসেম, আজাদ আহমেদ, মিজানুর রহমান সহ ১৫ থেকে ২০ জন তরুণ।
প্রথম অবস্থায় তারা ২ লক্ষ টাকার তহবিল সংগ্রহ করে চলতি বছরের রমজান মাসে সিসি ঢালাইয়ের কাজ প্রথমধাপে শুরু করে। পরবর্তী তে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও সর্বশেষ চতুর্থ ধাপে সিসি ঢালাইয়ের কাজের মাধ্যমে ৭৩৫ ফুট রাস্তা পাকা করে দৃষ্টান্ত স্হাপন করলো তারা। বর্তমানে ২ নং লক্ষিপুর বারেক মেম্বারের বাড়ী হতে পান্জেখানা মসজিদ পর্যন্ত রাস্তা সিসি ঢালাইয়ের আওতায় আনা হয়েছে।
এ বিষয়ে সাহসী এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্যোক্তা সেলিম আহমেদ বলেন, সরকারি প্রকল্প বরাদ্দের অপেক্ষা না করে স্হানীয় উদ্যোগে আমরা ১৫/২০ জন সহপাঠী মিলে রাস্তা কাজ করা উদ্যোগ গ্রহন করি। এতে করে পাড়া মহল্লার সকলের নিকট হতে সমর্থন পাই। প্রাথমিক কাজে ২ লক্ষ টাকার তহবিল সংগ্রহ করে কাজে হাত দেই। এ সময় যারা অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করতে পারে নি তারা কায়িক শ্রম দিয়ে আমাদের সহায়তা করেছে। পরবর্তীতে বালু ও পাথর সংগ্রহ কাজে হাত দেই। ধীরে ধীরে ৭৩৫ ফুট রাস্তার প্রথম ধাপ রোজা মাসে সম্পন্ন করি।
তিনি আরো বলেন স্হানীয়দের পাশাপাশি ২ নং জৈন্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম আমাদের প্রকল্পের কাজে সহযোগিতার হাত বাড়ান। এখন পর্যন্ত চারধাপে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার অধিক খরচ হয়েছে। তার মধ্যে চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম প্রায় ৫ লক্ষ টাকার বরাদ্দ দিয়েছেন। তাছাড়া এই প্রকল্পে প্রবাসী, চাকরিজীবি, ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি স্হানীয় ইউপি সদস্য নজির আহমেদ পুরো সময় জুড়ে সার্বিক সহযোগিতা করেন। তিনি বলেন দ্বিতীয় প্রকল্পে আরো ৭০০ ফুট রাস্তা পাকা করনের উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে।
স্হানীয় ব্যবসায়ী আকতার হোসেন আকাশ বলেন, তার বাড়ী পাশ্ববর্তী আসামপাড়া গ্রামে। যারা সাহসী এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে তারা সবাই তার বন্ধু মহল। তিনি বলেন তাদের এই উদ্যোগের বাস্তবায়ন দেশ ও সমাজের জন্য অনুকরণীয়।
স্হানীয় ইউপি সদস্য নজির আহমেদ বলেন, উদ্যোক্তা সবাই আমার গ্রামের ছোটভাই। প্রথমে তারা সাহসী এই প্রকল্পের বিষয়ে আমাকে অবহিত করে। আমি সার্বক্ষণিক ভাবে তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। তাছাড়া প্রকল্প চলাকালীন সময় চেয়ারম্যান মহোদয় সহ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বড় একটা বরাদ্দ দিয়ে তাদের সহায়তা করা হয়েছে। এর জন্য তিনি চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম সহ অন্য অর্থদাতা ও সেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে যারা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছেন সকলকে ওয়ার্ডের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে ২ নং জৈন্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম বলেন, যাদের উদ্যোগে চেলেন্জিং এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়েছে তারা শুধু রাস্তা পাকা করণ কাজে নয় বরং অতিতে অনেক সমাজ সেবামুলক কাজ, বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো সহ অনেক সামাজিক উন্নয়ন মুলক কাজের সাথে তারা জড়িত। তাদের এই মহতী উদ্যোগকে আমি সমর্থন করি। এই প্রকল্পের শুরুর সময় তারা আমাকে অবগত করেছিলো। আমি সে সময় তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলাম। আজ চতুর্থ ধাপে সিসি ঢালাইয়ের মাধ্যমে ৭৩৫ ফুট রাস্তা পাকাকরণের কাজ সমাপ্তি হলো। এতে করে শুধু ২ নং লক্ষিপুর গ্রামবাসী নয় বরং পাশ্ববর্তী আমবাড়ী,ডুলটিরপাড় এলাকার মানুষ যাতায়াতের সুবিধা ভোগ করতে পারবে। তিনি আরো বলেন দ্বিতীয় প্রকল্পে আরো ৭০০ ফুট রাস্তা পাকা করণের কাজ তারা শুরু করতে যাচ্ছে। এতে অতীতের মত ২ নং জৈন্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদ সার্বিক সহযোগিতায় তাদের পাশে থাকবে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।